সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : পুরো পৃথিবীতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ঘটুক বা না ঘটুক, সবুজ শিল্প বিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে। দুটি ব্লকে প্রায় এক হাজার একর জায়গাজুড়ে পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা (গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি) গড়ে তোলার মাধ্যমে এই বিপ্লব ঘটাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা)।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটির (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী গণমাধ্যমগুলোকে বলেন, এটি একটি বিস্তৃত শিল্পনগরী। এখানে সব ধরনের ভারী শিল্প স্থাপিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে ব্যাপক বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান তৈরি হবে। আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই শিল্পনগরীটির অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শেষ করতে বদ্ধপরিকর। এটি বাস্তায়িত হলে এখানেই অন্তত ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এ ছাড়া সারা দেশে ১০০টি ইকোনমিক জোন তৈরির কাজও এগিয়ে চলেছে। ’
এতে অল্প সময়ের মধ্যে দেশের রপ্তানি আয় কয়েক গুণ বাড়বে বলে মনে করেন পবন চৌধুরী। এই আয় দেশীয় অর্থনীতির প্রসার ও জিডিপিতে যুক্ত করবে নতুন মাত্রা।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীর সবুজ অংশে ৫০০ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত হচ্ছে বসুন্ধরা শিল্পাঞ্চল। এই শিল্পনগরীতে জমি বরাদ্দ পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে বসুন্ধরাই সর্বপ্রথম ভারী শিল্প স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। এ লক্ষ্যে দ্রুত এগিয়ে চলেছে শিল্প-কারখানা স্থাপনের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। ইতোমধ্যে প্রশাসনিক ভবনের বেইজমেন্টের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। সম্পন্ন হয়েছে ডরমেটরি ভবনের দোতলার ছাদ। আর বসুন্ধরা কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের সিভিল কাজ শুরু হবে আগামী মাসেই। সব ঠিক থাকলে আগামী বছরের ডিসেম্বরে উৎপাদন শুরু হবে এই কারখানায়। বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল মিলস নির্মাণকাজ উদ্বোধনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আশা করা হচ্ছে এর সিভিল কাজ শুরু হবে শিগগিরই। এটিরও ২০২১ সালের মধ্যে উৎপাদনে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আর বসুন্ধরা প্রি-ফেবরিকেটেড কোম্পানির কারখানা নির্মাণকাজের সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। এমনকি এ শিল্পনগরীতে বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন নিয়মিত দাফতরিক কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে আগামী মাস থেকেই। শুধু বসুন্ধরা ইকোনমিক জোনেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্তত ৪০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সবুজ শিল্পাঞ্চল অংশে এশিয়ান পেইন্ট, মডার্ন সিনটেক্সের শিল্প-কারখানার অবকাঠামোর নির্মাণযজ্ঞ চলছে দ্রুতগতিতে।
বেজা সূত্র জানায়, সবুজ শিল্পনগর নির্মাণের একটি পৃথক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে। এর মধ্যে ৫০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা) দেবে বিশ্বব্যাংক। বেসরকারি বিনিয়োগ ও ডিজিটাল এন্টারপ্রেনারশিপ (প্রাইড) শীর্ষক এক প্রকল্পের আওতায় বিশ্বব্যাংক বিনিয়োগ করছে এই অর্থ।
বেজার কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরীর বিএসএমএসএন-২ জোনকে অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশীয় বিনিয়োগ ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা সহজ হবে। এতে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, পণ্য বহুমুখীকরণের মাধ্যমে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া সর্বোপরি মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের সুযোগ তৈরি হবে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন সহায়ক হবে বলে মনে করে বেজা। একইভাবে সবুজ শিল্পের বিপ্লবের পথ উন্মোচন হবে সারা দেশে।
বেজা সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল, বিজিএমইএ গার্মেন্টস পার্ক ও পিপিপি জোন এবং ৭২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৫০০ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২০ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার এবং সম্ভাব্য কর্মসংস্থান (বিজিএমইএ গার্মেন্টস পার্ক, বেপজা ও এসবিজি ইকোনমিক জোন) প্রায় ১০ লাখ।
শুধু বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনকে ৫০০ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিজিএমইএ গার্মেন্টস পার্কের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫০০ একর জমি। পিএইচপি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের জন্য ৫০০ একর, অনন্ত গার্মেন্টস পার্কের জন্য ১৫০ একর, এসিআই ১০০ একর, মেট্রো নিটিং ১০০ একর এবং বিএসআরএম ১৪০ একর জমি বরাদ্দ পেয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, বরাদ্দকৃত এই জমিতে কল-কারখানা নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে। এই শিল্পনগরীতে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আরও রয়েছে বিশ্বখ্যাত ম্যাকডোনাল্ড স্টিল, টিকে গ্রুপ, কারমো ফোম ইন্ডাস্ট্রিজ, ম্যাঙ্গো টেলিসার্চেসিস, বিডিসিএম অনলাইন, সামুদা ফুড প্রোডাক্টস, সিরাজ সাইকেল ইন্ডাস্ট্রিজ, আবদুল মোনেম গ্রুপ, স্টার অ্যালাইড এবং আয়েশা পোশাক সংস্থা। করোনাভাইরাস মহামারীর বাধা সত্ত্বেও এসব শিল্পগ্রুপের কারখানা স্থাপনের অবকাঠামোর নির্মাণকাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে। জানা গেছে, এই শিল্পনগরীতে থাকবে নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। গড়ে তোলা হচ্ছে বর্র্জ্য শোধনাগার। এর অভ্যন্তরে তৈরি হচ্ছে ৩০ কিলোমিটার রাস্তা। বেজার তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর পর্যন্ত দেশি-বিদেশি মিলিয়ে অন্তত ১৯ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে এই শিল্পনগরীর অনুকূলে, যার ১০ বিলিয়ন ডলারই বিদেশি বিনিয়োগ।